প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: লন্ডনের কিংস কলেজের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এক গবেষণায় মানুষের একাধিকবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। ওই গবেষণা বলছে, কোনও মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার শরীরে এই রোগ প্রতিরোধের যে ক্ষমতা তৈরি হয়, সেটি খুব বেশিদিন টিকে থাকে না। গবেষকরা বলছেন, শরীরে অ্যান্টিবডির এই ক্ষণস্থায়ী অবস্থানের কারণে ভ্যাকসিন দিয়েও করোনাভাইরাস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নাও হতে পারে।
কীভাবে আমাদের শরীর প্রাকৃতিকভাবেই অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে এবং রোগমুক্ত হওয়ার পর এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন টিকে থাকে, তা জানতেই এই গবেষণা সম্পন্ন হয়। কিংস কলেজের বিজ্ঞানীদের ওই গবেষণা থেকে জানা গেছে, অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে কীভাবে শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং করোনা নেগেটিভ ফলাফল আসার পর কয়েক সপ্তাহ বা মাসখানেক সময় অ্যান্টিবডি স্থায়ী হয়।
গবেষণা সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৬ জনের সবার মধ্যে শনাক্তকরণযোগ্য অ্যান্টিবডি ছিল। এই অ্যান্টিবডি তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের আক্রমণ বন্ধ করতে পেরেছিল। তবে রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সবচেয়ে বেশি কার্যকর থাকে এবং তারপর দ্রুত তা কমে যেতে শুরু করে।
ওই গবেষণার সূত্রে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকার সময় ৬০ শতাংশ মানুষের দেহে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে সুস্থ হওয়ার তিন মাস পর সেই অ্যান্টিবডি থাকে মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষের দেহে। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির মাত্রা ২৩ গুণ পর্যন্ত কমে যায়। এমনকি তিন মাস পর কয়েক জনের রক্তে অ্যান্টিবডি শনাক্ত পর্যন্ত করা যায়নি।
গবেষক দলের প্রধান ড. কেটি ডোরস বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষের দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতার মতো পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটি হ্রাস পেতে থাকে। আপনি কতটা লড়াই করতে পেরেছিলেন তার ওপরও অ্যান্টিবডি কতদিন শরীরে স্থায়ী হবে তা নির্ভর করে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ ঠিক কতটা কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারবে সে প্রশ্নের সন্ধানে এবং টিকা উন্নয়নের জন্য এ গবেষণা তাৎপর্যপূর্ণ।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নানাভাবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষণা বলছে, তবে সেই লড়াইয়ের মূল অস্ত্রটি যদি হয় অ্যান্টিবডি তাহলে ঋতু পরিবর্তনের সময়কার সর্দি-কাশির মতো মানুষ একাধিকবার ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে টিকাও হয়তো বেশিদিন সুরক্ষা দিতে পারবে না।
ড. ডোরস বলেন, ‘সংক্রমিত হলে মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে যদি সংক্রমিত হওয়ার পর শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি মাত্র দুই থেকে তিন মাস স্থায়ী হয় এবং তারপর হ্রাস পায় তবে টিকা দেওয়া হলেও সম্ভবত একই অবস্থা হবে। তাই হয়তো মানুষকে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর এক ডোজ টিকা নেওয়াই হয়তো যথেষ্ট হবে না।’
ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকের শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়নি বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না তার প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। অনেকের শরীরের অ্যান্টিবডি না থাকলেও শরীরে টি-সেলের উপস্থিতি রয়েছে। এই টি-সেল করোনায় আক্রান্ত কোষকে শনাক্ত ও ধ্বংস করে।
গবেষকরা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে, তবে কী হয় তা দেখার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।